নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মুরাদ হোসেনকে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই ফাইয়াজ হোসেন সাতদিনের রিমান্ড করেন। শুনানি নিয়ে মহানগর হাকিম জাকী আল ফারাবী দুই দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।
এ সময় আইনজীবী শফিকুল ইসলাম দীপু ও আরো কয়েকজন তার রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি করেন।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর কলাবাগানের বাসা থেকে মুরাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাতে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভায় শিক্ষক মুরাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলে, বাবা-মার পরই শিক্ষকের অবস্থান। পরিবারে বাবা-মা আর সামাজিক জীবনে শিক্ষকই হলেন বাবা-মা। তারা যদি এ কাণ্ড করেন তাহলে তাকে কী বলা যায়? সে শিক্ষক নামের কলঙ্ক। রক্ষক এ ক্ষেত্রে ভক্ষকের ভূমিকায় নেমেছে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়, মুরাদ হোসেন শিক্ষক হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত। আজীবন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিন ওই স্কুলের শিক্ষক রাজনীতির নোংরা শিকার মাত্র।
ঘটনার দিন অভিযোগকারী মেয়ের মা স্কুলের বাইরে প্রবেশপথে অবস্থান করছিলেন, কখন এ ঘটনা ঘটল- এমন প্রশ্ন তুলে আসামীপক্ষ বলে, কথিত ঘটনার তদন্ত হয়েছে। সেখানে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। গত ২২ তারিখে তিন সদস্যের কমিটি লিখিত প্রতিবেদন দেয়, যেখানে মুরাদকে নির্দোষ বলা হয়। শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মুরাদকে বিমর্ষ দেখা যায়।
এর আগে কোচিং সেন্টারে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সোচ্চার হলে আজিমপুরের দিবা শাখার ওই জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে শনিবার প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
সেদিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভিযোগের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ার পর শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।
গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কোচিংয়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয়। তবে ওই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয়ে রোববার অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ছাত্রীরা আজিমপুর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। একই দিনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও চাকুরিচ্যুতির দাবি করেন।