জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদেরকে প্রায় ১লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে জন্ম সনদ, এনআইডি, পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়া শক্তিশালী চক্রের ২৩ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)।
ডিবি পুলিশ বলেন, ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশী দাগি অপরাধীদেরকে ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় পাসপোর্ট করে দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছে।
এই চক্রে গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা নারী - পুরুষ, দালাল ও ২ আনসার সদস্য।গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গারা হলো- উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান ও রশিদুল। এসময় তাদের কাছে থেকে - মোট ১৭ টি পাসপোর্ট, ১৩ টি এনআইডি, ৫ টি কম্পিউটার, ৩ টি প্রিন্টার, ২৪ টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির সংশ্লিষ্ট শত শত দলিলপত্র জব্দ করেছে।
সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের(ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, শনিবার রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডায় এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট এবং কম্পিউটারসহ ৩ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও ১০ জন বাংলাদেশীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য সংগৃহীত ডকুমেন্টস বিশ্লেষণ করে রবিবার দিনে ও রাতে কক্সবাজার, টাঙ্গাইল এবং ঢাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ২ আনসার সদস্যসহ রোহিঙ্গা ও বাঙালি দালাল চক্রের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোহিঙ্গা দালাল- আইয়ুব আলী ও মোস্তাকিম। আনসার সদস্য ২ জন, জামসেদুল ইসলাম ও মো. রায়হান। কুখ্যাত বাঙালি দালাল- রাজু শেখ, শাওন হোসেন ওরফে নিলয়, ফিরোজ হোসেন ও মো. তুষার মিয়া।
যেভাবে কম্পিউটার দোকানের আড়ালে প্রতারণা:
তাদের প্রতারণা সম্পর্কে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, উত্তরাতে ফিরে ফিরে কম্পিউটারের দোকান খুলে এ কাজে করেন। গ্রেপ্তারকৃত অপর দালাল গুলো হলো- মো. শাহজাহান শেখ, মো. শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন মো. মাসুদ আলম, মো. আব্দুল আলিম, মো. মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো. সোহাগ (২৮)।
যেভাবে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় আনা হয়:
গ্রেপ্তারকৃত চক্রের একটি কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল এদের জন্য জন্ম সনদ, এনআইডি বানিয়ে দেয়। সর্বশেষে অন্য দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে এক্সপ্রেস, সুপার এক্সপ্রেস ধরনের টাকা জমা দেয়া, বায়োমেট্রিক্স করা ও ছবি তুলার ব্যবস্থা করে দেয়।
ডিবি জানায়, ছয় ঘন্টার মধ্যে জন্ম সনদের জন্য এরা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে দেয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
জব্দ করা আলামতের বরাতে ডিবি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত দালালদের মোবাইলে শত শত পাসপোর্ট করে দেয়ার প্রাসঙ্গিক সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গিয়েছে যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩ টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে।
যেসব জেলার ঠিকানা ব্যবহার করা হয় :
ডিবিকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে থাকে।
প্রযুক্তি অনুশীলনে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ডাটা, ডিজিটাল জন্ম সনদ ডাটা, স্মার্ট এনআইডি ডাটা ব্যাংক আছে যেখানে বিভিন্ন বায়োমেট্রিক্স, ছবিসহ নানা তথ্য সংরক্ষিত।
এ সকল তথ্য কোনরকম ভেরিফাই না করেই ইচ্ছামতো তৈরি করা কাগজপত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট অফিসে যে কেউ দালালদের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে, বায়োমেট্রিকস দিতে এবং পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের স্মারক পাসপোর্ট তৈরীর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে রোহিঙ্গা ডাটা, ডিজিটাল জন্ম সনদ ডাটা এবং স্মার্ট এনআইডি ডাটা ভেরিফাই করলেই রোহিঙ্গাসহ নন - বাংলাদেশিদেরকে সনাক্ত করা সম্ভব। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছে।