স্টাফ রিপোর্টার , মানিকগঞ্জ ।। ১৮ এপ্রিল
গ্রামটির নাম সৈয়দপুর।মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিগঙ্গা নদীর চরাঞ্চলে এ গ্রামটি অবস্থিত।গ্রামটিতে কোন হাট বাজার ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাই। চোখে পরারমত উল্লেখিত তেমন কিছু না থাকলেও সবজিসহ নানা জাতের ফসলের ভান্ডার হিসেবে গ্রামটির বেশ পরিচিতি রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে প্রায় দুইশত বছর আগে এই অঞ্চলে ছেদু ফকির নামে এক কামেল বুজুর্গ ছিলেন। তার নাম অনুশারেই গ্রামটির নাম সৈয়দপুর রাখা হয়েছে।সম্প্রতি সৈয়দপুর গ্রামটি নিয়ে বেসরকারি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বারসিক মাঠ পর্যায়ে এক অনুসন্ধান মূলক সমীক্ষা শুরু করেছেন।সমীক্ষনের মাধ্যমে গ্রামটির ৫০ বছর পূর্ব হতে বর্তমান পর্যন্ত তুলনামূলক তথ্য, কৃষি জমির সংকটের রুপ ও সমাধানে করনীয় বিষয়সমুহ আলোকপাত করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানাযায়,আয়তনের দিকথেকে গ্রামটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক দেড় কিঃমিঃ এবং প্রস্ত প্রায় এক কিলো মিটার।গত ২০১১ ইং সালের আদম শুমারীর তথ্যমতে গ্রামটিতে জনসংখ্যা ছিলো ৩৮৩ জন।বর্তমান নারী পুরুষ মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৫৫ জন।এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশ মানুষই কৃষি,বাকি দশ ভাগ চাকুরি ও অন্যান্য পেশার উপর র্নিভরশীল।এই গ্রামে শতভাগ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস।
সৈয়দপুর গ্রামের মৃত শাহাবুদ্দিনের ছেলে মোঃ আলাউদ্দীন (৭০) জানান,পঞ্চাশ বছর আগে (১৯৭১ সালে) এই অঞ্চলে আউশ আমন সহ ২৩ জাতের ধান,তিল ও কাউনের চাষ হত। বর্তমানে ০৫ জাতের ধান চাষ হয়। এলাকাবাসির দেয়া তথ্যমতে, ১০৭০ সালে কৃষি পরিবার ১৭ বিঘা জমি চাষের আওতায় ছিল।বর্তমানে তা ০৪ বিঘায় নেমে এসেছে। ফলে কৃষি জমির সংকট দেখা দিয়েছে।এলাকাবাসির ধারনা সৈয়দপুর গ্রামের কৃষি জমির সংকটের অন্যতম কারন হচ্ছে কালীগঙ্গা নদীর ভাংগন।তারা জানান,বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানির স্রোত ও চাপ বেশি থাকলে নদীতে ভাংগন দেখাদেয়।আর পানির চাপ বেশি হওয়ার কারন হচ্ছে জলবায়ুর পরির্বতন।জলবায়ু পরির্বতনের কারনে উত্তরের বরফ গলা পানি,উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং সমতলে অতি বৃষ্টি হয়।কৃষি জমির সংকট নিরসনে সরকারের নীতিমালা সংশোধন ও যথাযথ ভাবে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে এলাকাবাসি মনে করেন ।
মুক্তিযুদ্ধাকালীন সময়ের কথা জান্তে চাইলে এলাকার প্রবীন মানুষ মোঃ মিনহাজ উদ্দিন জানান, সৈয়দপুর গ্রামের বুকচিরে বয়ে যাওয়া কালিঙ্গগা নদী মুক্তি যুদ্ধের এক ইতিহাস ধারন করে আছে। যুদ্ধ চালাকালীন সময়ে এ নদী দিয়ে ভেসে গেছে হাতে পায়ে পেরেক মারা অবস্থায় কতশত লাশ। স্থানীয়দের ধারনা,দূর দূরান্ত হতে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা তাদেরকে মেরে এ নদীদিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে। মিনহাজ উদ্দিন বলেন,মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তিনি একদিন বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের আইরমারা গ্রাম হতে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছিলেন। সৈয়দপুর খেয়াঘাটের একটু আগেই দেখেন পাকসেনারা ভানু পাটনী নামে এক খেয়া নৌকার মাঝিকে গুলি করে মেরে বটগাছের নিচে ফেলে রেখেছে। সে কথা মনে হলে আজো তার গা শিহরিত হয়ে উঠে।