নইন আবু নাঈম, শরণখোলা বাগেরহাট থেকেঃ
বাঘের আক্রমন উপক্ষো করে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহকারী মৌয়ালরা বনরক্ষীদের কাছ থেকে রেহাই পায় না। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে ৫’শতাধিক মৌয়াল ৪২টি পাস(অনুমতি পত্র) নিয়ে ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস মধু সংগ্রহ করে। সুন্দর বনের শরণখোলা রেঞ্জের বন্রক্ষীরা এসিএফ মাহবুব হাসানের নির্দেশক্রমে জনপ্রতি আধাকেজি(৫০০ গ্রাম) করে মধু মৌয়ালদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক আদায় করে নেয়। এ মধু না দিলে মৌয়ালদের বিভিন্ন অযুহাতে শাস্তি দেয় বনরক্ষীরা। আর এতে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকার মধু হাতিয়ে নেয় বনরক্ষীরা। এছাড়া বিএলসিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে ওই স্টেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবন, আর এ বনের মধু জগৎ বিখ্যাত। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এই মধুর চাহিদা না আছে। এই মধু সংগ্রহ করতে যেয়ে যুগে যুগে কত মানুষ বাঘের পেটে গিয়েছে তার কোনো হদিস নেই। প্রতিবছর শত শত মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তারা অন্যায় ভাবে তাদের কাছ থেকে যতবার পাস নিবে ততবার আধাকেজি(৫০০ গ্রাম) করে মধু তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে আদায় করে নেয়। এছাড়া স্মার্টটিম ও বিভিন্ন ধরনের মোবাইল টিম কেও মধু দিতে হয় বলে মৌয়ালরা জানায়। আর এতে করে মৌয়ালদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বনরক্ষীদের খামখেয়ালীপনা ও মামলার ভয়ে তারা কখনও মুখ খুলতে পারেনা। ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের সাথে জড়িত উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের করিম মিয়া, উত্তর সাউথখালীর রহমান হাওলাদার, সোনাতলা গ্রামের আব্দুল আলী(ছদ্ম নাম ধারী) এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে পাশ(অনুমতি) নিতে নৌকার বিএলসি ও জনপ্রতি সরকারি রেটের চেয়ে দ্বিগুন টাকা আদায় করে নেয় স্টেশনের কর্মকর্তারা। এছাড়া মধু না দিলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বন আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দেয় বনরক্ষীরা এমন অভিযোগ করেন মৌয়ালরা। এমনকি মধু দিতে না পারলে তাদের অগ্রিম পাশের টাকা দিয়ে কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জসহ অন্যান্য স্টেশনের বনরক্ষীরা সুন্দরবনে মধু পাশ দেওয়ার আগেই লোক ভাড়া করে অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মৌয়ালদের মাধ্যমে মনকে মন ফলসী মধু সংগ্রহ করে স্টেশনে জমা রাখে। পরে তা শরণখোলার রায়েন্দা বাজার, বাগেরহাট, ভান্ডারিয়া সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরণখোলা রায়েন্দা বাজারের এক মধু বিক্রেতা জানায় গত ৭/৮ বছর ধরে তিনি শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে বড় কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রতি বছর মধুর মৌসুমে তিন থেকে চার লক্ষ টাকার মধু ক্রয় করেন। এছাড়া তার মত বিভিন্ন এলাকার অনেকেই শরণখোলা রেঞ্জ থেকে মধু ক্রয় করে থাকেন। তাতে ধারনা করা যায় প্রতিবছর সুন্দরবনের বনরক্ষীরা ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকার মধু মৌয়াল ও তাদের ভাড়া করা লোক দিয়ে সংগ্রহ করে ও পরে বিক্রি করে। তবে মৌয়ালরা জানায় তাদের কাছ থেকে আধা কেজি করে মধু নেওয়ার সময় বনরক্ষীরা জানায় উপর মহলে মধু দেওয়া হয়, তাই এ মধু তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মাহবুব হাসান এ সংক্রান্ত বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, স্টেশনের কে বা কাহারা আধাকেজি করে মধু নেয় তা জানা নেই এবং বিএলসিতে বেশি অর্থ নেওয়া হয় না।
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম বলেন, মৌয়ালেেদর কাছ থেকে বনরক্ষীদের মধু নেওয়া ও বিএলসিতে বেশি অর্থ আদায় করার বিষয়টি তিনি জানেন না, তবে মৌয়ালরা অভিযোগ করলে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, বন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মৌয়ালদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক মধু আদায়ের বিষয়টি তিনি জানেন না এবং এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান বন সংরক্ষক(সিসিএফ) মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, বাঘের আক্রমনের ভয় উপক্ষো করে যে সকল মৌয়ালরা কষ্ট করে মধু সংগ্রহ করে সেই মধু বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী জোর করে আদায় করে নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ জনক। যদি কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই তবে তদন্ত স্বাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।