সেদিন ১লা বৈশাখ , রোদের তেজ নেহাত মন্দ নয় , তাতে কি ? মধ্য গগনের সূর্য কে উপেক্ষা করেই মাঠের উপর দিয়ে হেটে চলেছেন সারিবন্ধ মানুষ , বয়স সেখানে সংখ্যা মাত্র । সমান উৎসাহে হেঁটে চলেছে সাত বছরের সুমিত থেকে সত্তুর ছুঁই ছুঁই প্রমীলা দেবী । গন্তব্য ? জলপাইগুড়ি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের মিলন মেলা । একই পথের পথিক সেদিন আমিও । অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা।
কোনো এক রাজপুত্তুরের সোনার কাঠির ছোয়ায় উধাও " নো ম্যানস ল্যান্ড " নামের শব্দ টি । কাঁটা তার ঢেকে গিয়েছে জনতার সমাগমে , সীমান্তে নেই ভারী বুটের শব্দ , সীমান্ত রক্ষীর কাঁধে নেই বন্ধুক ? এ যেন এক রূপ কথার দেশ , সীমান্ত রক্ষীরা বারুদ কিংবা বন্ধুকের নলের বদলে জল , সরবতের, গ্লাস হাতে ব্যাস্ত "ভারত বাংলাদেশ মিলন মেলার " অতিথিদের আপ্যায়নে । ওপার এপার মিলে মিশে একাকার ।
অনেকের-ই প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা প্রায় কয়েক দশক পর ,কথা কান্না হাসি মিশে অসাধারণ অনুভূতি সেখানে ।বাতাসে ওদিক থেকে ভেসে আসা আজানের সুরের সাথে মিশে যাচ্ছে এদিকের কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ । ছুঁড়ে কিংবা বাঁশের কঞ্চির ডগায় ঝুলিয়ে ওপার থেকে আসছে ইলিশ , সাবান , এপার থেকে যাচ্ছে শাড়ি , বোতল বন্দী নরম পানীয় । "শুভ নববর্ষ "কলরবে মুখরিত বৈশাখের প্রথম বাতাস । দেশ , কাল , ধর্ম ,সব ছাপিয়ে দিনটি হয়ে উঠেছিল শুধুই বাংলা ও বাঙালীর।
মাথায় জড়ানো "শুভ নববর্ষ " লেখা সবুজ রঙের ফিতে ,পরনে লালপাড়ের সাদা শাড়ি , কাটা তাঁরের ওপার থেকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে জনা কয়েক কিশোরী , এপার থেকেও হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম । হাতে কেজি খানিকের একটি ইলিশ ঝুলিয়ে সস্ত্রীক মেলা থেকে বাড়ি মুখো হয়েছেন মধ্য চল্লিশের জনৈক ভদ্রলোক , ঠিক তার পাশে এসে প্রতিবেশী মফিজুর রহমান বলে উঠলেন , ও চক্রবর্তী , সরিষা দিয়া হইবো নাকি ? সহাস্য মুখে চক্রবর্তী গিন্নির চট জলদি জবাব , দুপুরে আইয়া পইড়েন , এক লোগে খাওন যাইবো ।
বিশ্বাস করুন। অবর্ণনীয় এক অনুভূতি , অনুভব করছিলাম এ বাংলা এখনো রবীন্দ্রনাথের , এ বাংলা এখনো নজরুলের । যেন মেলার মাঠে রবীন্দ্র নজরুলের কাছে জিরো রানে ক্লিন বোল্ড হয়ে , ব্যাট বগল দাবা করে হাত থেকে গ্লাভস খুলতে খুলতে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন বক ধার্মিক বাহিনী I
কলমে সুশান্ত দাস ( পুরনো লেখা )